পার্টি অফিস থেকে জিএম কাদেরকে জুতাপেটা করে তাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। রোববার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে জাতীয় পার্টি (রওশনপন্থী) আয়োজিত এক সভায় এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আসন্ন অধিবেশনে সংসদে জিএম কাদেরের উপনেতার আসনটি সরে যাবে। বেগম রওশন এরশাদের চেয়ারের পাশে তিনি আর বসতে পারবেন না। বেগম রওশন এরশাদের পাশের চেয়ারে বসবেন অন্যকেউ। সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। জিএম কাদেরের চেয়ার কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
বিরোধী দলের এই চিফ হুইপ বলেন, আগামী ২৬ নভেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে। সেখান থেকে বিদায় নেবে জিএম কাদের। জি এম কাদেরের সঙ্গে তিনজন এমপি ছাড়া আর কেউ নেই। আগামী ২৬ নভেম্বর রওশন এরশাদের ডাকা জাতীয় কাউন্সিলের আগেই এমপিরা কোনদিকে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই এ বিষয় নিয়ে সংশয় থাকবেন না। সময়মতো আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছে যাব। বনানী ও কাকরাইল অফিস আমাদের হবে। জিএম কাদেরকে জুতাপেটা করে ওখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, জাতীয় পার্টির অবৈধ চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের আছেন। তিনি জাতীয় পার্টির সাইনবোর্ড ব্যাবহার করে মনোনয়ন বাণিজ্য করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি করে টাকা নিচ্ছেন। আবার বিএনপির জোটে যাবেন, সে জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবেন সেখান থেকেও টাকা নিচ্ছেন। দুই নৌকায় পা রেখে রাজনীতি হয় না। জিএম কাদের তাই করছেন। আমি প্রশ্ন করতে চাই, জিএম কাদের সাহেব আপনার কত টাকা প্রয়োজন? সরকারের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। টাকাগুলো কি করছেন?
জিএম কাদের কখনও রাজনীতিবিদ ছিলেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিএম কাদের ছিলেন পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের একজন কর্মচারী। সেখান থেকে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। পেট্রোলিয়াম করপোরেশন থেকে দুর্নীতির দায়ে তার চাকরি চলে যায়। অথচ তিনি নিজেকে ক্লিন ইমেজ হিসাবে দাবি করেন। নামের পেছনে জনবন্ধু লেখেন, তার নির্বাচনি নিজ এলাকায় ‘জনশত্রু’ হিসেবে পরিচিত।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘জিএম কাদের এরশাদ সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে চান না। কারণ, এরশাদ সাহেব তাকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে পাঁচবার বহিষ্কার করেছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকে এরশাদ সাহেবের চিহ্ন মুছে ফেলতে চেয়েছেন তিনি।’
সভায় অন্যদের মধ্যে কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘জিএম কাদেরের চারপাশে রয়েছে চাটুকার দল। তারা জাতীয় পার্টিকে বাণিজ্যের প্লাটফর্ম বানিয়েছেন। এই কালো থাবা থেকে জাতীয় পার্টিকে মুক্ত করতে হবে। জাপার দলীয় গঠনতন্ত্রে যেসব কালোধারা রয়েছে, তা সংশোধন করা হবে আগামী জাতীয় কাউন্সিলে। দল থেকে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের দলে ফিরিয়ে আনা হবে।’
এছাড়া সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, বেগম রওশন এরশাদ দল সংস্কার করার জন্য জাতীয় কাউন্সিল ডেকেছেন। আর জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে তার ‘পিতৃ সম্পত্তি’ পেয়েছে বলে মনে করেন। আসলে এটি তার পিতৃ সম্পত্তি নয়। এটি এরশাদের সম্পত্তি। ভাইয়ের সম্পত্তি কখনও ভাই পায় না। এরশাদ সাহেবের সম্পত্তি পাবেন তার স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ।
এস এম আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, এম এ গোফরান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।